রবিবার, ১৯ জুন, ২০২২

সিলেটে পানি কমছে, ছড়াচ্ছে পানিবাহিত রোগ

সিলেটে পানি কমছে, ছড়াচ্ছে পানিবাহিত রোগ


 

উজানে বৃষ্টিপাত কমে আসায় সিলেটে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। তবে এখনও অনেক জায়গায় পানি রয়ে যাওয়ায় আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়া পরিবারগুলো বাড়ি ফিরতে পারছে না। যেসব বাড়ি-ঘর থেকে পানি নেমে গেছে সেগুলোতে চলছে পরিষ্কারের কাজ।

 

এদিকে পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে পানিবাহিত নানা রোগ ছড়াতে শুরু করেছে। নগরীর বেশিরভাগ বাসা বাড়ি থেকে এখনও পানি নামেনি। নানা স্থানে জমে থাকা পানিতে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। 

উজানের ঢল ভারি বর্ষণে গত সপ্তাহ ধরে উত্তর পূর্বাঞ্চলের নিম্নাঞ্চলে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। বসতবাড়িসহ পানি উঠে যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও।

 বলেন, “বৃষ্টিপাত কমে আসায় কয়েকদিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে উঠবে। উজানে বৃষ্টিপাত কমেছে, আগামী কয়েকদিনও তেমন ভারি বর্ষণের আভাস নেই। এমন পরিস্থিতিতে বন্যার আর অবনতির শঙ্কা নেই। বিরাজমান পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত থাকবে।

 

সকাল ৯টায় সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে দশমিক ২০ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার দশমিক ৬৪ সেন্টিমিটার উপরে প্রবাহিত হয়েছে। অমলশীদ পয়েন্টে কুশিয়ারা নদীর পানি দশমিক ৪২ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার দশমিক ৯০ সেন্টিমিটার উপরে এবং শেওলা পয়েন্টে দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার দশমিক ৩২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছিল।

সিলেটে পানি কমছে, ছড়াচ্ছে পানিবাহিত রোগ বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস সতর্কীকরণ কেন্দ্র।

 

 

পাহাড়ি ঢল অতিবৃষ্টির কারণে চলতি মাসের ১১ মে থেকে সিলেটের বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। ধীরে ধীরে বন্যা বৃদ্ধি পেয়ে সিলেট মহানগরেরও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। এক এক করে মহানগরীর প্রায় ২০টি ওয়ার্ড বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সময় অনেক মানুষ বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে ওঠেন।  

সিলেট নগরীর শাহজালাল উপশহর, ঘাসিটুলা, মাছিমপুর, ছড়ারপাড়, তালতলা, কুয়ারপাড়, মেন্দিবাগ, কামালগড়, চালিবন্দর, যতরপুর, সোবহানিঘাট, কালীঘাট, শেখঘাট, তালতলা, জামতলা, মাছুদীঘিরপাড়, রামের দিঘীরপাড়, মোগলটুলা, খুলিয়া টুলা, দক্ষিণ সুরমার বঙ্গবীর রোড, ভার্থখলা, মোমিনখলা, পিরোজপুর, আলমপুর ঝালোপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় বাসাবাড়িতে পানি ওঠে। এসব এলাকার অনেক বাসা-বাড়িতে কোমর সমান পানি ছিল।

সোমবার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নগরের তালতলা, জামতলা, মণিপুরি রাজবাড়ি, যতরপুর, মিরাবাজার, শাহজালাল উপশহর, মেন্দিবাগ, ছড়ারপাড় এলাকায় বেশ কিছু বাড়িঘর পানির নিচে। বাসিন্দাদের ঘরের সামনে এখনও হাঁটুপানি রয়ে গেছে। পানি কালো রং ধারণ করে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। তাই ওইসব এলাকার বাসিন্দারা পানিবাহিত রোগে শঙ্কায় আছেন। ছাড়া বন্যার পানিতে বিভিন্ন ময়লা-আবর্জনা ভেসে এসে ঘর আশপাশে জড়ো হয়েছে। জমে থাকা পানিতে জন্ম নিয়েছে মশাসহ নানা কীটপতঙ্গ।

নগরীর বন্যাকবলিত এলাকার বেশ কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, ব্লিচিং পাউডার দিয়ে তারা এখন নিজেদের বাসা-বাড়ি পরিষ্কার করছেন। আসবাবপত্র ধোয়ামোছার কাজও চলছে। যাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়েছিল, তারাও এখন পরিষ্কারের কাজে ব্যস্ত।

 

 

 

নগরীর তালতলার বাসিন্দা আরিফ আহমদ বলেন, প্রায় দিন বন্যার পানিতে বাড়িঘর ডুবেছিল। এখন পানি নেমেছে। তবে ঘর-বাড়ি পরিষ্কার করে ঘরে ফিরতে আরও সময় লাগবে।

এদিকে, বন্যাকবলিত লোকজনের মধ্যে পানিবাহিত নানা রোগের লক্ষ্মণ দেখা দিয়েছে। শহরের বন্যাকবলিত এলাকায় মেডিকেল টিম গঠন করেছে সিলেট সিভিল সার্জন সিলেট সিটি করপোরেশন। এছাড়া বন্যা কবলিতদের মধ্যে পানি বিশুদ্ধিকরণ ট্যাবলেট, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ওষুধ বিতরণ করছেন তারা।

সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. এস এম শাহরিয়ার বলেন, বন্যার কারণে পানিবাহিত রোগ বেড়েছে। ৩৭৬ জন লোক ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। পাশাপাশি জন চর্ম রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।

আমাদের মেডিকেল টিম ইউনিয়ন পর্যায় থেকে মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় কাজ করছে যাতে পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে না পড়ে। তবে বন্যাপরবর্তী পানিবাহিত রোগের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়।

 

তিনি বলেন, সিলেটে বন্যাকবলিত মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ১৪০টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে যার মধ্যে সিলেট সদরে ১০টি, দক্ষিণ সুরমায় ৮টি, বিশ্বনাথে ১১টি, ওসমানীনগরে ৯টি, বালাগঞ্জে ৭টি, ফেঞ্চুগঞ্জে ১০টি, গোলাপগঞ্জে ১৬টি, বিয়ানীবাজারে ১৬টি, জকিগঞ্জে ১০টি, কানাইঘাটে ১২টি, গোয়াইনঘাটে ১০টি, জৈন্তাপুরে ১১টি এবং কোম্পানীগঞ্জে ৭টি। এর বাইরে জেলা সদরে ৩টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়।

তিনি জানান, এসব দলে চিকিৎসক ছাড়াও নার্সসহ স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট অনেকেই আছেন। প্লাবিত এলাকার সবখানেই যেন স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে প্রতিটি মেডিকেল টিমকে নির্দেশনা দেওয়া আছে।

 

সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের দেওয়া তথ্য মতে, জেলার বন্যাকবলিত এলাকায় এখন পর্যন্ত সর্বমোট ৩৮৭ রোগী পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ডায়রিয়ায় ৩৭৬ জন, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে জন এবং চর্মরোগে জন আক্রান্ত হয়েছেন। অন্যরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের সিলেটের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, “এখনও সেভাবে রোগ-ব্যাধি ছড়ায়নি। কেবল বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে পানিবাহিত রোগ বৃদ্ধির শঙ্কা রয়ে যায়। তবে সে জন্য আমাদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে। সব রোগীর সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে আমরা তৎপর রয়েছি। কেউই চিকিৎসার বাইরে থাকবে না।

 

 

 

 

সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, “সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে তিনটি মেডিকেল টিম মাঠে আছে, প্রয়োজনে আরও গঠন করা হবে। তবে এখন পর্যন্ত পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়া কিংবা অন্যান্য রোগের প্রকোপ দেখা যায়নি। এর কারণ বিশুদ্ধ পানি পানি বিশুদ্ধিকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে। তবে পানি পুরোপুরি নেমে যাওয়ার পর সে রোগগুলোর ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা আছে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, “পানি নেমে যাওয়ার পর সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা শাখার দল গঠন করে পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে মশা-মাছি কীটপতঙ্গ নিধনের জন্য ওষুধ ছিটানো এবং ময়লা দুর্গন্ধ দূর করতে ব্লিচিং পাউডার ছিটানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমদ বলেন, “বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হয়েছে। পানি দ্রুত নেমে যেতে শুরু করেছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে দ্রুত পরিস্থিতি

স্বাভাবিক হয়ে যাবে।


 

 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

https://mayablog59

চট্টগ্রামে পদ্মা সেতুর রেপ্লিকা, নগরজুড়ে আয়োজন

  চট্টগ্রামে পদ্মা সেতুর রেপ্লিকা , নগরজুড়ে আয়োজন   https://mayablog59.blogspot.com  পদ্মা সেতু উদ্বোধনের উৎসবের রেশ শুধু পদ্ম...

new blog